অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কী? অ্যাফিলিয়েট করে আয়

অনেকেই জানতে চান অনলাইনে কীভাবে প্যাসিভ ইনকাম করা যায়। তাদের উত্তরে বলবো, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে অনলাইনে প্যাসিভ আয় করা যায়। আজকে আমাদের আর্টিকেলের বিষয়বস্তু হচ্ছে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং সম্পর্কে। আজকে আপনাদেরকে জানানোর চেষ্টা করবো,

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কী?

কীভাবে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করা যায়?

কীভাবে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয় করা যায়?

ইত্যাদি। অর্থাৎ অ্যাফিলিয়েট সম্পর্কে হাবিজাবি যা আছে বিস্তারিত আজকের এই আর্টিকেলে জানার চেষ্টা করবো ইন-শা-আল্লাহ! তাহলে চলুন আর কথা না বাড়িয়ে মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয়

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কী?

ইংরেজি অ্যাফিলিয়েট (Affiliate) শব্দের বাংলা অর্থ হলো শাখা। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হলো কমিশনের বিনিময়ে কোন কোম্পানির প্রোডাক্ট বিক্রি করে দেওয়া। সাধারণত অনলাইন ভিত্তিক বা ইকমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের সুযোগ দিয়ে থাকে।

আর যারা এই ধরনের কাজ করে তাদেরকে বলা হয় অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার। বিষয়টি যদি বুঝতে গোলমেলে মনে হয় তাহলে চলুন আরেকটু সহজ করে বুঝা যাক।

প্রতিটি বড় বড় কোম্পানি তাদের প্রোডাক্ট বা সার্ভিস বিক্রির জন্য নির্দিষ্ট বেতনের ভিত্তিতে সেলস এক্সিকিউটিভ নিয়োগ দেয়। যাদেরকে প্রতিমাসে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ প্রোডাক্ট বিক্রির টার্গেট দেওয়া হয় এবং তারা নির্দিষ্ট পরিমাণ বেতনের ভিত্তিতে এই কাজটি করে থাকে।

কিন্তু আবার এমন অনেক বড় বড় এবং জনপ্রিয় কোময়ানি আছে যারা কমিশনের বিনিময়ে কর্মী নিয়োগ দেয়। তাদেরকে কোম্পানির প্রোডাক্ট বা সার্ভিস বিক্রি করতে বলা হয়ে থাকে। যদি সে কোন প্রোডাক্ট বিক্রি করতে পারে তাহলে তাকে নির্দিষ্ট পরিমান কমিশন প্রদান করা হয়। সে যত বেশি প্রোডাক্ট বিক্রি করতে পারবে তার কমিশন তত বাড়বে।

উদাহরণসরূপ বলা যায়, ধরুন আমি একটা মোবাইল শপের অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামে যুক্ত হয়েছি। আপনাকে একটা মোবাইল সম্পর্কে বিস্তারিত ভালো-মন্দ জানিয়ে সেটি কেনাতে রাজি করিয়েছি, এখন আপনি যদি ঐ মোবাইলটি সেই শপ থেকে কিনেন তাহলে আমি এর বিনিময়ে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশন পাবো। আর এটাই হলো মূলত অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং। এখানে কমিশন ভিত্তিক কাজ করা হয়।

অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম কীভাবে কাজ করে?

এতক্ষনণে নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন যে, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কী। কিন্তু আপনাদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে, অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম আসলে কীভাবে কাজ করে বা সংশ্লিষ্ট কোম্পানি বুঝবে কীভাবে যে কেউ আমার অ্যাফিলিয়েটে প্রোডাক্ট কিনেছে। আপনাদের মনে যদি এই ধরনের প্রশ্ন থাকে তাহলে চলুন বিষয়টি পরিষ্কার করা যাক।

আপনি যখন কোন ওয়েবসাইটে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার হিসেবে যুক্ত হোন তখন আপনার জন্য একটা আলাদা ড্যাসবোর্ড এবং ইউনিক লিংক তৈরি হয়ে যায়।

সেখান থেকে যখন আপনি কোনো প্রোডাক্টের অ্যাফিলিয়েট লিংক শেয়ার করেন এবং সেই লিংক থেকে কেউ প্রোডাক্টটি ক্রয় তখন ওয়েবসাইটের সিস্টেম সেটা ডিটেক্ট করতে পারে এবং আপনার ড্যাশবোর্ডে তা দেখায়, এটা সম্পূর্ণ অটোমেটিক সিস্টেম। এভাবে মূলত ইকমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারদের ট্র্যাক করে থাকে।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কয় প্রকার?

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং সাধারণত ২ প্রকারঃ

  1. ফ্ল্যাটফর্ম ভিত্তিক অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং
  2. নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং
আরও পড়ুনঃ বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসায় আইডিয়া

ফ্ল্যাটফর্ম ভিত্তিক অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং

এটা অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের এমন একটি ধরণ যেখানে বিভিন্ন জনপ্রিয় ইকমার্স প্রতিষ্ঠানের অ্যাফিলিয়েট প্রোডাক্ট ও সার্ভিস তালিকাভুক্ত থাকে। 

অর্থাৎ এটা  একটা কমন প্ল্যাটফর্মের মতো, আপনি এখানে একটা অ্যাকাউন্ট থেকেই একাধিক কোম্পানির প্রোডাক্ট ও সার্ভিসের অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিনং করতে পারবেন। এমন কয়েকটি জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম হলোঃ

নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং

আর এমন অনেক জনপ্রিয় ইকমার্স প্রতিষ্ঠান আছে যাদের নিজস্ব অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম আছে। অর্থাৎ শুধুমাত্র তাদের ওয়েবসাইটে যুক্ত হয়ে তাদের অ্যাফিলিয়েটই করা যাবে। এরকম কিছু প্রতিষ্ঠান হলোঃ

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে কি কি লাগে?

এটি করতে আপনার আহামরি কোন কিছু লাগবে না, এমনকি খুব বেশি পরিমাণ টাকাও প্রয়োজন নেই। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে মূলত একটি ডিভাইস (কম্পিউটার বা মোবাইল), একটা প্ল্যাটফর্ম (ওয়েবসাইট বা সোশ্যাল মিডিয়া পেইজ) এবং কিছু পুঁজি লাগে।

আপনি কম্পিউটার বা মোবাইল যেকোনো একটা দিয়েই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয় শুরু করতে পারেন। কম্পিউটার বা ল্যাপটপ থাকলে ভালো হয়, কারণ মোবাইলে অনেক সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায় না।

তবে এমন না যে আপনি মোবাইল দিয়ে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে পারবেন না, মোবাইল ফোন দিয়ে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয় করা যায়।

প্রোডাক্ট বা সার্ভিস কাস্টমারের কাছে বিক্রি করার জন্য আপনার অবশ্যই একটা জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম থাকতে হবে। সেটা হতে পারে ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেইজ, ইউটিউব চ্যানেল ইত্যাদি।

সবচেয়ে ভালো হয় যদি আপনার একটা ওয়েবসাইট থাকে এবং ওয়েবসাইটের পাশাপাশি ফেসবুক পেইজ ও ইউটিউব চ্যানেল থাকলে আরো বেশি সুবিধা। এরপর আপনার বিভিন্ন সময়ে পেইড ক্যাম্পেইন চালানোর জন্য কিছুর পুঁজির প্রয়োজন হতে পারে।

আপনি পুজি ছাড়াও অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয় করতে পারবেন, তবে পেইড ক্যাম্পেইন চালালের আপনার কাজে সুবিধা হবে।

মোবাইল দিয়ে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হলো জটিলতামুক্ত একটা কাজ। মোবাইল দিয়েও অ্যাফিলিয়ে মার্কেটিং করে আয় করা যায়। এখানে আপনাকে কিছু সময় অসুবিধার সম্মুখীন হতে হবে।

এমন কিছু কাজ থাকে যেগুলো আসলে কম্পিউটার ছাড়া ভালোভাবে করা যায় না। তবে মোবাইলেও করা যায়, কিন্তু ওতটা ভালো হয়না।

আরও পড়ুনঃ মোবাইল দিয়ে আয় করার উপায়

ফ্রি ও পেইড ট্রাফিক কী?

ফ্রি ট্রাফিক হলো বিনামূল্যে সোশ্যাল মিডিয়া বা সার্চ ইঞ্জিন থেকে অর্গানিক ট্রাফিক জেনারেট করা। যদি আপনার ওয়েবসাইটে ভালোমতো এসইও করাতে পারেন তাহলে আপনি সহজেই গুগল, বিং, ইয়াহুর মতো জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন থেকে অর্গানিক ট্রাফিক পাবেন।

এছাড়াও আপনার সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে যদি ভালো পরিমাণ মানুষ এঙ্গেজ থাকে তাহলে আপনি সেখান থেকে অর্গানিক ট্রাফিক জেনারেট করতে পারবেন। আরে এটাই হলো ফ্রি ট্রাফিক।

আর পেইড ট্রাফিক হলো টাকা দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় বিজ্ঞাপন বা ক্যাম্পেইন চালিয়ে ট্রাফিক জেনারেট করা। তবে আপনার উচিত হবে শুরুতে ফ্রি ট্রাফিক জেনারেট করার।

আপনি যখন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং সেক্টরে ভালো করতে পারবেন এবং এ সম্পর্কে ভালো ধারনা চলে আসবে তখন পেইড ট্রাফিক আনা।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে কয় টাকা আয় করা যায়?

প্রথমেই বলে রাখি, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করা আয় হলো ফ্রিল্যান্সিং বা মুক্ত পেশা। একানে ইনকামের নির্দিষ্ট কোনো পরিমাণ নেই।

আপনি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে প্যাসিভ টাকা আয় করতে পারেন। বিশ্বে এমন অনেক ব্যক্তি আছে যারা প্রতিমাসে শুধুমাত্র অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয় করে ২ লাখ থেকে ৪ লাখ টাকা।

আপনি এখান থেকে কত টাকা আয় করতে পারবেন সেটা সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করছে আপনার দক্ষতা ও কাজের গতির ওপর। তবে এতটুকু জেনে রাখুন যে, এটা থেকে প্যাসিভ আয় করা যায় যেটা লিমিটলেস। শুধু কাজে মনোযোগী হতে হবে।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কী? অ্যাফিলিয়েট করে আয়

কীভাবে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করবো?

তিনটি ধাপ অনুসরণ করে আপনি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করে আয় করতে পারেন। সেগুলো হলোঃ

  1. প্রোডাক্ট বা সার্ভিস ক্যাটাগরি সিলেক্ট করা
  2. প্ল্যাটফর্ম ও কন্টেন্ট তৈরি করা
  3. ট্রাফিক জেনারেট করা

আপনি অন্যান্য ভিন্ন উপায়েও শুরু করতে পারেন। কিন্তু আমার কাছে এই তিনটি ধাপ অনুসরণ করা ভালো মনে হলো বলে শেয়ার করছি।

প্রোডাক্ট বা সার্ভিস ক্যাটাগরি সিলেক্ট করা

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয় করতে হলে প্রথমেই আপনাকে প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের ক্যাটাগরি সিলেক্ট করতে হবে। আপনি কোন ধরনের প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করবেন সর্বপ্রথম সেটি সিলেক্ট করুন। 

বর্তমানে মানুষ অনলাইনে ফিজিক্যাল প্রোডাক্টের চেয়ে সার্ভিস বেশি কিনে থাকে। ফিজিক্যাল প্রোডাক্ট হলো সেই সকল জিনিস যেগুলোর শারীরিক অস্তিত্ত্ব আছে। আর ডিজিটাল সার্ভিস হলো সেগুলো যেগুলোর কোন শারীরিক অস্তিত্ত্ব নেই অর্থাৎ ধরা বা ছোঁয়া যায় না।

ডিজিটাল প্রোডাক্ট ক্রয় করলে কোন ডেলিভারি সমস্যা হয় না বিধায় মানুষ এগুলোর দিকে বেশি ঝুকছে। তাই চেষ্টা করুন ডিজিটাল সার্ভিস নিয়ে কাজ করার জন্য।

প্ল্যাটফর্ম ও কন্টেন্ট তৈরি করা

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয় করার দ্বিতীয় ধাপ হলো কোনো একটা জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা ও নিয়মিত সেখানে আপনার প্রোডাক্ট বা সার্ভিস ক্যাটাগরি নিয়ে পোস্ট করা। আপনার যদি একটা ওয়েবসাইট থাকে তাহলে সেখানে প্রোডাক্টের বিভিন্ন ভালো দিক, সুবিধা-অসুবিধা ও কেন কেউ প্রোডাক্টটি কিনবে সে সম্পর্কে পোস্ট করতে হবে।

এগুলো ফেসবুক পেইজ ও গ্রুপেও লিখতে পারেন। তাছাড়া একটি ইউটিউব চ্যানেলে প্রোডাক্ট সম্পর্কে রিভিউ দিতে পারেন এবং ডেস্ক্রিপশনে আপনার অ্যাফিলিয়েট লিংক সংযুক্ত করে দিবেন।

ট্রাফিক জেনারেট করা

কিছুক্ষণ আগেই আমরা উপরে ট্রাফিক জেনারেট সম্পর্কে আলোচনা করেছি। আপনি উপরোক্ত পদ্ধতি অনুসরণ করে ট্রাফিক জেনারেটের মাধ্যমে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয় করতে পারেন।

আরও পড়ুনঃ আকর্ষণীয় আর্টিকেল লেখার উপায় ও কৌশল

এই ছিলো মূলত অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কি, কীভাবে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করা যায় এবং অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয় করার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা। আশা করি সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ে ধারণা পেয়েছেন। এছাড়াও কোনো ধরনের প্রশ্ন থাকে তাহলে কমেন্টে জানাতে পারেন।

মন্তব্যসমূহ

  1. ভালো লিখেছেন। বিস্তারিত জানতে পারলাম

    উত্তরমুছুন
  2. ধন্যবাদ আপনাকে! খুশি হলাম জেনে, যে আর্টিকেলটি আপনার ভালো লেগেছে। ❤️

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন