মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক কিভাবে কাজ করে [বিস্তারিত]

আমরা প্রিয়জন ও পরিচিত কাউকে মোবাইলে কল দিলেই তা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে কানেক্ট হয়ে যায়। দুইজন ব্যবহারকারীর মধ্যে যতই দূরত্ব থাকুক না কেন সবসময়ই কয়েক সেকেন্ডে আমরা অপর প্রান্তের ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করতে পারি। জানেন, যে মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক কিভাবে কাজ করে এত দ্রুত? যদি না জেনে থাকেন তবে পড়তে থাকুন, আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য।

মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক কিভাবে কাজ

যে যেখান থেকে আজকে আমাদের এই আর্টিকেলটি পড়ছেন আশা করি সকলেই শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ্য আছেন। সকলের মঙ্গল কামনা করে আজকের আর্টিকেলটি শুরু করছি। মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক কিভাবে কাজ করে সেটা জানার আগে আমাদেরকে জানতে হবে টেলিফোন বা ল্যান্ডফোন কিভাবে কাজ করে।

১৮৭৫ সালে আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল টেলিফোন আবিষ্কার করেছিলেন। টেলিফোন মূলত একটি তারযুক্ত যোগাযোগ মাধ্যম। আমরা আগেকার দিনে (যদিও এখন কিছু কিছু অফিস, আদালতে টেলিফোন ব্যবহার হয়) যখন টেলিফোনে কারো সাথে যোগাযোগ করতাম সেটা ছিলো অনেক বড় একটি প্রক্রিয়া।

টেলিফোন মূলত কাজ করে তারের মাধ্যমে। অর্থাৎ প্রতিটি টেলিফোন একটি-অন্যটির সাথে তারের মাধ্যমে যুক্ত থাকে। এবং প্রতিটি টেলিফোনের নির্দিষ্ট একটি নম্বর থাকে, যেটা তার পরিচিতি। আমরা যখন টেলিফোনে নির্দিষ্ট কোন নম্বর ডায়াল করে কল করতাম তখন সেই টেলিফোন নম্বরে আমাদের কলটি চলে যেতে তার ব্যবহার করে।

আরো পড়ুনঃ ব্লকচেইন প্রযুক্তি কী এবং কিভাবে কাজ করে?

বর্তমান সময়ের আধুনিক মোবাইল ফোন অনেকটা টেলিফোনের যোগাযোগ ধারণাকে কাজে লাগিয়ে কাজ করে। শুধু পার্থক্য তারের। মোবাইলের তারবিহীন সিস্টেমকে বলা হয় সেলুলার নেটওয়ার্ক। তো চলুন জেনে নেয়, মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক কিভাবে কাজ করে!

মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক কিভাবে কাজ করে?

কোন দেশ বা এলাকা অনেকগুলো সেলে বিভক্ত থাকে। এজন্য অনেকসময় মোবাইল ফোনকে সেলফোনও বলা হয়। প্রতিটি সেলে একটি করে মোবাইল টাওয়ার বা বেস স্টেশন থাকে ( Base Transceiver Station -BTS) থাকে। বিভিন্ন টেলিযোগাযোগ সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান এই টাওয়ারগুলো স্থাপন করে থাকে। একটা এলাকায় অনেকগুলো টাওয়ার বা বেস স্টেশন থাকে।

আর একটি এলাকার সবগুলো টাওয়ার বা বেস স্টেশন একটি বেস স্টেশন কন্ট্রোলারের সাথে যুক্ত থাকে। আর প্রতিটি বেস স্টেশন কন্ট্রোলার (Base Station Controller -BSC) একটি মোবাইল সুইচিং কেন্দ্রের (Mobile Switching Center -MSC) সাথে যুক্ত থাকে। এই মোবাইল সুইচিং সেন্টারটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মোবাইল ফোন নেটওয়ার্কের জন্য।

মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক ও টাওয়ার কিভাবে কাজ করে

আমরা যখন মোবাইলে কথা বলি তখন আমাদের মোবাইল ফোনে থাকা ইন্টার্নাল একটি মাইক্রোন আমাদের কন্ঠস্বরকে গ্রহন করে ডিজিটাল ওয়েভে রুপান্তর করে। ডিজিটাল ওয়েব বলতে বাইনারি সংখ্যাকে বুঝাচ্ছি। এরপর আমাদের ফোনে একটি অ্যান্টেনা থাকে, যেটা ডিজিটাল ওয়েভকে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভ বা রেডিও ওয়েভে রুপান্তর করে।

এবার আমাদের আশেপাশে থাকা সবচেয়ে নিকটবর্তী টাওয়ার ফোনের সেই ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভকে রিসিভ করে এবং সেটিকে বেস স্টেশন কন্ট্রোলারের (BSC) কাছে পাঠিয়ে দেয়। বেস স্টেশন কন্ট্রোলার সেটাকে মোবাইল সুইচিং কেন্দ্রে (MSC) পাঠায়। এখানেই মূল প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়।

মোবাইল সুইচিং সেন্টার হলো এমন একটি স্থান যেখানে আপনার সিমের সকল ডেটা বা তথ্য সংরক্ষণ করা থাকে। অর্থাৎ আপনি সিমের নম্বর, সিমের মালিকের নাম, সিমটি যে ডিভাইসে ব্যবহার করা হচ্ছে সে ডিভাইসের ইএমআই (EMI) নম্বর, সিমটি কোন ঠিকানায় আছে ইত্যাদি সকল ডেটা MSC তে সংরক্ষিত থাকে।

MSC এই সকল ডেটা বিশ্লেষণ করে খুঁজে বের করে, যাকে কল করা হয়েছে সেই ব্যক্তি এখন কোন সেলে অবস্থান করছে। ঐ ব্যক্তি যে সেলে অবস্থান করবে MSC সেই সেলের বেস স্টেশনে উক্ত ফ্রিকোয়েন্সিটা পাঠিয়ে দিবে। তখন বেস স্টেশন সেটা গ্রহন করে ওই ব্যক্তির মোবাইলে পাঠাবে। মোবাইল ওটাকে গ্রহন করবে এবং ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভ থেকে ডিজিটাল ওয়েভে রুপান্তর করবে। তারপর ডিজিটাল ওয়েভকে শব্দশক্তিতে রুপান্তর করে স্পিকারের মাধ্যমে ঐ ব্যক্তির কানে পৌছাবে।

মোবাইল নেটওয়ার্ক মূলত এভাবেই কাজ করে। প্রক্রিয়াটি অনেক জটিল মনে হচ্ছে তাই না? ডিজিটাল প্রযুক্তির কাছে এই প্রক্রিয়াটি মোটেও ওতটা জটিল না, কয়েক সেকেন্ডেই পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়ে যায়।

মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক কিভাবে কাজ করে (উদাহরণ)

চলুন একটা উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি একটু স্পষ্ট করতে চেষ্টা করি। ধরুন, আপনি আপনার বন্ধুকে কল করবেন। আপনার বন্ধুর নাম রহিম, সে থাকে রাজশাহীতে আর আপনি থাকেন কুমিল্লায়। এখন আপনি যখন রহিমের নম্বরে ডায়াল করবেন তখন আপনার ফোন থেকে একটি সিগন্যাল আপনার সবচেয়ে নিকটে থাকা টাওয়ারে (বেস স্টেশন) যাবে। তারপর ঐ টাওয়ার আপনার ফোনের সিগন্যালকে একটি বেস স্টেশন কন্ট্রোলারের মাধ্যমে মোবাইল সুইচিং সেন্টারে পাঠাবে। মোবাইল সুইচিং সেন্টার আপনার বন্ধুর মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে তার ঠিকানা খুঁজে বের করবে যে রহিম এখন রাজশাহীর কোন সেলে (এলাকায়) আছে। রহিম যে সেলে থাকবে মোবাইল সুইচিং সেন্টার আপনার সিগন্যালকে সেই সেলের টাওয়ারে পাঠাবে। টাওয়ার সেটা গ্রহণ করে আপনার বন্ধুর মোবাইল ফোনে পাঠাবে। এভাবেই মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক কাজ করে থাকে।

*বেস স্টেশন বা টাওয়ারগুলো সবসময় সচল থাকে।

মন্তব্যসমূহ

  1. আপনার লেখাগুলো অনেক তথ্যবহুল ও উপকারী অনেক কিছু জানতে পারি

    উত্তরমুছুন
  2. অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে মতামত জানানোর জন্য! সাথেই থাকুন। 😊❤️

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন